১.পূর্ববর্তী পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন – রোজার উৎপত্তি এবং ফজিলত
যেসব কারণে রমজান মাসে রোজা ভঙ্গ করা যাবে কিন্তু পরে কাজা করতে হয় তা হচ্ছে
- মুসাফির অবস্থায়,
- রোগ-ব্যাধি বৃদ্ধির বেশি আশঙ্কা থাকলে,
- মাতৃগর্ভে সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে,
- এমন ক্ষুধা বা তৃষ্ণা হয়, যাতে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতে পারে,
- শক্তিহীন বৃদ্ধ হলে,
- কোনো রোজাদারকে সাপে দংশন করলে,
- মহিলাদের মাসিক হায়েজ-নেফাসকালীন রোজা ভঙ্গ করা যায়।
যেসব কারণে শুধু কাজা আদায় করতে হয়
- স্ত্রীকে চুম্বন বা স্পর্শ করার কারণে যদি বীর্যপাত হয়,
- বমি করলে,
- পাথরের কণা, লোহার টুকরা, ফলের বিচি গিলে ফেললে,
- বিন্দু পরিমাণ কোন খাবার খেলে তবে অনিচ্ছাকৃত ভাবে বা মনের ভুলে খেলেও রোজা ভাংবে না তবে মনে আসা মাত্রই খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে,
- নাকে বা কানে ওষুধ দিলে (যদি তা পেটে পৌঁছে),
- মাথার ক্ষতস্থানে ওষুধ দেওয়ার পর তা যদি মস্তিষ্কে বা পেটে পৌঁছে,
- যোনিপথ ব্যতীত অন্য কোনো ভাবে সহবাস করার ফলে বীর্য নির্গত হলে,
- স্ত্রী লোকের মাসিক শুরু হলে, ইত্যাদি।
রোজা রাখতে অক্ষমদের জন্য বিকল্প হল ফিদিয়া-
ফিদিয়া (এছাড়াও ফিদ্যা নামেও পরিচিত) হল অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য অর্থ বা খাবার সমন্বিত একটি ধর্মীয় অনুদান। যখন কেউ অসুস্থ বা বেশি বয়স্ক (বৃদ্ধ বা অল্প বয়স্ক) হয়, প্রয়োজনীয় সংখ্যক দিনের জন্য রোজা বা উপবাস করতে পারে না এবং রোজা বা উপবাস রাখতে সক্ষম হন না তখন ফিদিয়া দেওয়া হয়।
ফিদিয়া এবং কাফফারা হল কোন কাজ বা কোন কিছু করা বাধ্যতা মুলক ছিল কিন্তু তা ছুটে গেলে বা বাদ পড়ে গেলে ইসলামী রীতি অনুযায়ী ভুল/অক্ষমতার বিনিময় কোন কিছু দান/সাহায্য করার নিমিত্তে একটি ধার্মিক অনুদান। এই অনুদান খাদ্য বা টাকা হতে পারে এবং এটা অভাবীদের খাওয়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই শব্দ দুইটি কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। কোরআন দুটি শব্দকে আলাদা করা হয়েছে, তবে একটি ধারণা উভয় শব্দকে একীভূত করে দেয়। কিছু অনলাইন সংস্থার মতে ফিদিয়া এবং কাফফারার বিকল্প কিছু রয়েছে।
অর্থাৎ বার্ধক্য, অসুস্থতা বা অপারগতার কারণে কেউ নামাজ বা রোজার মতো মৌলিক বিধানগুলো পালন করতে না পারলে তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা ও বিধান রয়েছে ইসলামে। এমনি একটি বিধান হলো- ফিদিয়া (বিনিময় বা মুক্তিপণ)। ফিদিয়া হচ্ছে এক ধরনের কাফফারা।
প্রতিটি রোজা বাদ পড়ার জন্য ফিদিয়া দিতে হবে। তবে যদি কেউ অসুস্থতার জন্য বা সফরে যাওয়ার কারণে তাদের রোজা রাখতে না পারে, তবে তার জন্য ফিদিয়া দিতে হবে না। তবে কুরআনে বর্ণিত বিধি অনুসারে পরবর্তী তারিখে রোজা রাখতে হবে।
আল্লাহ বলেছেন,
রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াত স্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী রূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।
(সুরা বাকারা ১৮৫) আল-বায়ান
সাধারণ অসুস্থতার পর যদি সুস্থ হয়ে ছেড়ে দেয়া রোজা কাজা হিসাবে আদায় করার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সুস্থ হওয়ার পর কাজা রোজা আদায় করতে হবে। আর যদি মানুষটি এমন অসুস্থ হয় যা সুস্থ হয়ে রোজা রাখার মতো শারীরিক সক্ষমতা অর্জনের সম্ভাবনা না থাকে বা কম থাকে অথবা বার্ধক্যজনিত কারণে রোজা পালনে সম্পূর্ণ অক্ষম হন, তাহলে ছেড়ে দেয়া প্রতিটি রোজার জন্য এক ফিতরা পরিমাণ ফিদিয়া দিতে হবে। অর্থাৎ ফিদিয়া হলো একজন লোকের এক দিনের খাবারের সমান।
আল্লাহ বলেছেন,
নির্দিষ্ট কয়েক দিন। তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে, কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদয়া- একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা। অতএব যে স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সৎকাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। আর সিয়াম পালন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জান।
(সুরা বাকারা ১৮৪) আল-বায়ান
যাকাত ও ফিতরা যাদেরকে দেয়া যায়, ফিদিয়াও তাদেরকেই দিতে হয়। ফিদিয়া এককালীন বা একসঙ্গেও আদায় করা যায়। একজনের ফিদইয়া অনেককে দেওয়া যায়, আবার অনেকের ফিদইয়া একজনকেও দেওয়া যায়।
যাকে ফিদিয়া দেওয়া হবে, তার রোজাদার হওয়া বাধ্যতা মুলক নয়। যেমন- নাবালেগ মিসকিন, অসহায় অসুস্থ বা অতিবৃদ্ধ মানুষ যারা নিজেরাই রোজা পালনে অক্ষম, তাদেরকেও যাকাত, ফিতরা ও সদকার মতো ফিদিয়া প্রদান করা যাবে।
তবে অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ ও মুফতির মতে ফিদিয়া প্রদানের পর যদি সে সুস্থ হবার পর সে রোজা রাখতে সক্ষম হয় সেক্ষেত্রে তাকে কাজা হিসাবে ছেড়ে দেয়া রোজা আদায় করতে হবে।
(ফাতাওয়া রশিদিয়া)
ফিদিয়া কাফফারা যাকাত সদকা কাদেরকে দেয়া যাবে বিষয়ে আল্লাহ সুস্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছেন।
আল্লাহ বলেন,
নিশ্চয় সদাকা হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
(সুরা তৌবা ৬০) আল-বায়ান
রমজান সম্পর্কিত পরবর্তী পর্ব – মেরু অঞ্চলের দেশসমূহে নামাজ – রোজার বিধান
সম্পাদনায় – সিকদার হেফাজত উল্লাহ