পূর্ববর্তী পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন – রোজার উৎপত্তি এবং ফজিলত

রমযান মাসের রোজার ইতিহাস

সক্ষম মুসলমানেরা সুবেহ সাদেকের সময় পানাহার শেষ করার পর থেকে সূর্যাস্তের সময় পর্যন্ত সংযম পালন শেষে মুসলমানগণ ইফতারির মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করেন।

কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে,

হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।

(সুরা বাকারা ১৮৩) আল-বায়ান

সংযম বা উপবাসের সন্ধান প্রায় সব ধর্মেই পাওয়া যায়। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের রোজা রাখার পালন পদ্ধতি ভিন্নও হলেও তারা সিয়াম পালন করে থাকে।

সে সুত্রে বলা যায় যে, আদমের (আঃ) সময় থেকেই বিভিন্ন নবীর এমনকি নূহর (আঃ) যুগেও রোজা ছিল।

কারণ, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)) বলেন:

হযরত নূহ (আঃ) ১ লা শাওয়াল ও ১০ জিলহজ ছাড়া সারা বছর রোযা রাখতেন।

( ইবনে মাজাহ ১৭১৪)

হযরত ইবরাহীমের যুগে ৩০টি রোজা ছিল বলে কেউ কেউ লিখেছেন।

হযরত দাউদের (আঃ) যুগেও রোযার প্রচলন ছিল। হাদিসে বলা হয়েছে, হযরত দাউদের (আঃ) একদিন রোযা রাখতেন এবং একদিন বিনা রোযায় থাকতেন।

আরব বাসীরাও ইসলামের পূর্বে রোযা সম্পর্কে কমবেশী ওয়াকিফহাল ছিল। মক্কার কুরাইশগণ অন্ধকার যুগে আশুরার (অর্থাৎ ১০ মুহররম) দিনে এ জন্য রোযা রাখতো যে, এই দিনে খানা কাবার ওপর নতুন গেলাফ চড়ানো হতো। মদীনায় বসবাসকারী ইহুদীরাও পৃথক ভাবে আশুরা উৎসব পালন করতো। অর্থাৎ ইহুদীরা নিজেদের গণনানুসারে সপ্তম মাসের ১০ম দিনে রোযা রাখতো।

রমযানের রোজার শর্তাবলী

রোজার কিছু মৌলিক আচার আচরণ আছে যেগুলু ফরজ বা বাধ্যতা মুলক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন রোজাদারকে শারীরিক ভাবে সুস্থ ও সবল হতে হবে এবং রোজা রাখতে সক্ষম অর্থাৎ প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে। সক্ষমতা সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিমকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। কিন্তু শারীরিক অসমর্থতার কারণে সে এ দায়িত্ব থেকে আপাততঃ মুক্তি পেতে পারে। কিন্তু পরে তার প্রতিবিধানে যা রয়েছে অর্থাৎ কাজা ও কাফফারার বিধান পূর্ণ করতে হবে।

নিচে রোজার ফরজ ও শর্তগুলো দেওয়া হলো

রোজার ৩ ফরজ :

  • নিয়ত করা,
  • সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকা,
  • যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা।

রোজা রাখার ৪ শর্ত 

  • মুসলিম হওয়া,
  • বালেগ/প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া,
  • অক্ষম না হওয়া,
  • ঋতুস্রাব থেকে বিরত থাকা নারী।

রোজার প্রকার ভেদ

রোজা পাঁচ প্রকার।

১) ফরজ রোজা: যা আবার চার প্রকার-

  • রমজান মাসের রোজা।
    • কোন কারণ বশতঃ রমজানের রোজা ভঙ্গ হয়ে গেলে তার কাযা আদায়ে রোজা।
    • রোজার মান্নত করলে তা আদায় করা।

২) ওয়াজিব রোজা: নফল রোজা রেখে ভঙ্গ করলে পরবর্তীতে তা আদায় করা ওয়াজিব।

৩) সুন্নত রোজা: মহরম মাসের নয় এবং দশ তারিখে রোজা রাখা।

৪) মুস্তাহাব রোজা: প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, এবং ১৫ তারিখে, প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারে, কোন কোন ইমামের মতে শাওয়াল মাসে পৃথক পৃথক প্রতি সপ্তাহে দুটো করে ছয়টি রোজা রাখা মোস্তাহাব। তবে ইমাম আবু হানিফার(রহ.) মতে এক সাথে হোক কিংবা পৃথক পৃথক হোক শাওয়ালের ছয়টি রোজা মুস্তাহাব।

৫) নফল রোজা: মোস্তাহাব আর নফল খুব কাছাকাছির ইবাদত। সহজ অর্থে নফল হলো যা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত নয় এমন ইবাদত পূণ্যের নিয়তে করা। রোজার ক্ষেত্রেও তাই।

তবে রোজা ভঙ্গ করলে তার প্রতিবিধান ও কাফফারা সম্পর্কে বিভিন্ন মত পাওয়া যায়, অর্থাৎ মত বিরোধও বিদ্যমান আছে।

রোজা ভঙ্গ হলে করনীয়

অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে বিনা কারণে রোজা ভঙ্গ করলে তাকে অবশ্যই কাজা এবং কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব।

কিন্তু কাজা রোজা ও কাফফারার পরিমানের বিষয়ে সর্বজন মান্য ও সর্বজন গৃহীত কোন মত নাই। বিভিন্ন রকমের মতামত পাওয়া যায়।  

অধিকাংশ ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষকদের মতে যতটি রোজা ভঙ্গ হবে, ততটি রোজা আদায় করতে হবে। কাজা রোজা একটির পরিবর্তে একটি অর্থাৎ রোজার কাজা হিসেবে শুধু একটি রোজাই যথেষ্ট।

তবে রোজা ভঙ্গ করলে তার প্রতিবিধান ও কাফফারা সম্পর্কে বিভিন্ন মত পাওয়া যায়, অর্থাৎ মত বিরোধও বিদ্যমান আছে।

রমজান সম্পর্কিত পরের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন – রমজান মাসে কোন কোন ক্ষেত্রে রোজা না রেখে পরবর্তী সময়ে কাজা এবং ফিদিয়া আদায় করতে হয়

সম্পাদনায় – সিকদার হেফাজত উল্লাহ