১৭১৬ খীৃষ্টাব্দে রানী ভবানীর জন্ম। তার পৈতৃক নিবাস বগুড়ার আদম দিঘীতে। ভবানী দেখতে খুবই সুন্দরী ছিল, মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার বিয়ে হয় নাটোরের রাজা রামাবান্ত চৌধুরী সাথে। রানী ভবানীকে নিয়ে জীবনানন্দ দাস তার অমর কাব্য বনলতাসেন রচনা করেন, রানী ভবানীকে তিনি অষোকের ধূসর জগতের ইতিহাসের সাথে তুলনা করেন, তার সৌন্দর্যকে তিনি শ্রাবস্ত্রীর কারুকার্যের সাথে তুলনা করে গেছেন।
জানা যায়- সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ দিকে রাজা রঘুনন্দন, মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব্যের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত হন। রঘুনন্দন এ কাজে যথেষ্ট পারদর্শিতা প্রদর্শন করলে মুর্শিদকুলি খান খুশী হয়ে পুরস্কার হিসেবে তাকে নাটোরে জমিদারী প্রদান করে রাজা উপাধিতে ভূষিত করেন, এবং তিনি নাটোরে বিশাল জায়গা জুড়ে সুরম্য প্রাসাদ নির্মান করেন।
পরবর্তীতে ১৭২৮ খৃস্টাব্দে রাজা রামকান্ত একে আধুনিক প্রাসাদ হিসেবে পূনরায় গড়ে তোলেন। রানীভবানীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ১৭৩১ খৃস্টাব্দে রামাকান্ত চৌধুরী রানী ভবানীকে বিয়ে করলে রানী এই প্রাসাদে পদার্পন করেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস রানী ভবানীর বয়স যখন মাত্র ৩২ বছর, ১৭৪৮ খৃস্টাব্দে রাজা রামকান্ত মৃত্যৃ বরণ করেন, অল্প দিনেই তিনি হন বিধবা।
রানী ভবানীর ছিল দুই পুত্র ও এক কন্যা, দুই পুত্র অকালে মৃত্যু বরণ করেন। রামকান্তের অকাল মৃত্যুতে সকল দায়িত্ব রানী ভবানীর উপর পড়ে। এবং অল্প দিনের মধ্যেই রানী সকলের প্রিয় পাত্রী হয়ে উঠেন। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কর কমিয়ে দেন। বার্ষিক আয় হতো দেড় কোটি টাকা যার মাঝে ৭০ লাখ মুর্শীদাবাদে কর হিসেবে প্রদান করে ৮০ লাখ টাকা পুরোটাই খরচ করতেন জনকল্যান মূলক কাজে।
নারী শিক্ষার প্রসার ও বিধবা নারীদের কল্যানে তিনি আজীবন কাজ করে গেছেন। তিনি নিজের জন্য তেমন কোন সঞ্চয় রাখতেন না,প্রজা সাধারণের কল্যানে সব ব্যয় করতেন। জানা যায় শেষ জীবনে রানী নবাবদের মধ্যে বিরোধ,ইংরেজদের অধিপত্য বিবিধ কারনে মহল ত্যাগ করেন। এই সময় তিনি বেশ অর্থ কষ্টে দিনাতিপাত করতেন।
১৮০২ খৃস্টাব্দে সমগ্র বাংলা তথা নাটোর রাজপ্রসাদের জৌলুস প্রজা হিতৈসী এই মহান নারী শাসক রানী ভবানীর জীবনাবসান হয়। কিন্তু তিনি আজো বেঁচে আছে তার মহত কর্মে, এবং ইতিহাসের পাতায় স্বরণীয় হয়ে থাকবেন হাজার বছর।
লেখা ও ছবি – মো: ইব্রহিম খলিল ভূইঞা