মাথা ঘুরানো বা মাথা ও কপাল ব্যাথার সমাচার

সাধারণত ইফতারের পরবর্তী সময়ে মাথা ঘুরানো বা ব্যাথার কথা অনেকেই বলে থাকেন। এর কারণ শরিরের পানি সল্পতা। এ সময় আমাদের দেহে পানির পরিমান কমে যায়। কিছুটা ইলেক্ট্রোলাইট ইমবেলেন্স থাকে। ফলে গ্লুকোজের চাহিদা বেড়ে যায়। সাধারন ভাবে আমাদের মস্তিষ্কে গ্লুকোজের চাহিদার কারনে এহেন অবস্হার সৃস্টি হয়। তাই ইফতারের ২০/৩০ মিনিট পর ডাবের পানি, গ্লুকোজের পানি,ফলের জুস বা রস পানে মাথা ব্যাথা বা ঘুরানো অনেকটাই কমে আসবে। কারন ইফতারে আমরা যে সকল সলিড খাবার আহার করি তা পরিপাকতন্ত্রে পৌছে পরিশোধিত হতে বেশ সময় প্রয়োজন হয়। তাই ইফতারের সময় জলীয় খাদ্যের পরিমান বেশী থাকাটা শ্রেয়।

পেটে ব্যাথার সাধারণ সমস্যা – আসলে সারা দিন পেট খালি থাকার কারনে এমনিতে স্টমাক বা পাকস্থলী এসিডিক অবস্হায় থাকে। এ অবস্হায় তৈলে তৈরী খাবার বেশী পরিমানে গ্রহন করলে এসিডের সাথে বিপাক ক্রিয়ায় আরো এসিড তৈরী করে ফলে ব্যাথার সৃস্টি হয়। তৈলের তৈরী খাবার খাওয়া যাবে তবে পরিমান কম রাখতে হবে। সাথে ভেজিট্যাবল জাতীয় খাবার রাখতে হবে। যেমন বুট ভাজা সুষম খাদ্য কিন্তু প্রটিন সমৃদ্ধ হওয়ার ফলে বিপাক প্রক্রিয়া সমস্য তৈরী করে তখন পেটে ব্যথা অনুভব হতে পারে।

বুট বা ছোলার স্হলে মটর সিদ্ধ রাখলে ভাল হয়। মটর প্রেটিন হলেও অনেক সুসহনীয়। যারা জীলাপি খেতে চান এটি খালি না খেয়ে যে কোন একটি কার্বোহাইড্রেটের সাথে মিশিয়ে আহার করতে পারেন। যেমন মুড়ির সাথে বা চিড়ার সাথে বা অল্প রুটির সাথে। তাহলে সরাসরি এসিডের সাথে বিক্রিয়া কম হবে ব্যথা কম হবে। ইফতারে অল্প পরিমানে তৈলাক্ত খাবারের সাথে বিভিন্ন ধরনের জলিয় খাবার আহার করতে পারেন। যেমন- চিড়া, চাম্পা কলা, ঘরে পাতা এক থেকে দেড় চামচ দৈয়ের বেশী না ইত্যাদি।

মোট কথা একক ভাবে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন বা ফ্যাট খাওয়া যাবেনা। প্রোটিন ৩০%। জলীয় ও কার্বোহাইড্রেট (সর্করা) ৭০% হতে পারে। সব মিলিয়ে পেট পুর্তি খাওয়া যাবে না। এক বা দেড় পেট খালি রেখে খেলে পেটের ব্যথা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার গ্রহনঃ আমাদের যাদের বসয় ৫০ পার হয়েছে এবং রোজা রাখি তাদের ক্ষেত্রে দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার বুঝে শুনে খাওয়া উচিৎ বলে মনে করি। যদিও দুধ একটি সুষম পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। কিন্তু আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে কারো কারো হজম শক্তি কমতে থাকে।অনেকেই IBS (Irritable bowl Syndrome) নামক একটি রোগে অল্প বিস্তর ভূগে থাকেন। কেউ তার রোগ সম্পর্কে জানে। আবার কেউ বা জানেনা। ফলে পেটে ব্যাথা হয়, পেট খারাপ থাকে। এধরনের সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। এধরনের ব্যক্তিদের দুধের তৈরি কোন খাবার গ্রহন করা উচিৎ নয়। কারন IBS হলে দুগ্ধ জাতীয় খাবার বারণ করা হয়। আবার ইফতারে যদি দুধের সরবত, দৈইয়ের সরবত,মাঠা পান করেন তখন কারো কারো IBS এর কারনে পেট খারাপ বা ব্যথা হতে পারে।

৫০+ বয়সী দের ইফতার ও সেহেরীর খাবার মেনু কেমন হওয়া প্রয়োজনঃ সেহেরীর খাবার কেমন হওয়া উচিৎ —- *নরম ভাত, *পাতলা ডাল, মিক্সড সালাড, মাছ ১ বা ২ টুকরা, কম পক্ষে ২ ধরণের সবজী। যদি সময় থাকে তাহলে খাবার ৩০ মিনিট পর দুধ আধা কাপ বা টক দই ১ কাপের ৩ ভাগের এক ভাগ। দুধ জাতীয় খাবারে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে।এর কাজ হলো বডিতে আয়রন পরিষোধিত হতে বাধা দেয়। তাই খাবার সাথে সাথে না খাওয়াটাই ভাল। ২য়ত: যে কোন সবজীতে অক্সালেট নামক একধরনের এনজাইম থাকে যার কাজ হলো ক্যালসিয়ামকে বাইন্ড করে। দুধের ক্যালসিয়ামর কারনে যদি বেশি পরিমানে বাইন্ড হয় তাহলে কিডনীতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাই বলে সব কিছুই খাওয়া আমরা বন্ধ করবো? না। সব কিছু সঠিক সময়ে ও সঠিক নিয়মে আহার করতে হবে।

ইফতারের মেনু কেমন হওয়া উচিৎ – দুই চার ধরনের সবজীর সমন্বয়ে সালাড (সবুজ ক্যাপসিকাম,শাশ,খিরা,গাজর,পেয়াজ,কাঁচা মরিচ,কাঁচা পেঁপে,পাকা পেঁপে,লেটুস,বাঁধাকপি পাতা,আলু বা পেয়াজের শেকর,বিট,ইত্যাদি।) *ছোলা সিদ্ধ *মটর সিদ্ধ * আলুর চপ। *পিয়াজু অবস্যাই নয় প্রোটিন পুরালে পয়জেনাস হয় তাই পিয়াজু খেলে পেটে ব্যাথা হতে পারে। *বেগুনি ১ পিস খাওয়া যেতে পারে। চিরা ভেজা,চাম্পা কলা,হালকা দৈয়ের পানিয় * লেবুর রস পানি মিশিয়ে লবন দেওয়া যাবেনা। তেঁতুলের রস কলে মিশ্রন করে লবন ছাড়া। ইস্ট ছাড়া রুটি (নান ও তুনদুল রুটিতে ইস্ট থাকে) সিদ্ধ ডিম, বিভিন্ন ধরনের ফল। চিকেন বা মাটন বা বিফ-১টুকরার বেশী নয়। ফালুদা আধাকাপ। দুধ জাতীয় খাবার খুব বেশী খাওয়া যাবেনা তবে ৩০ মিনিট পর পান করা যেতে পারে। এছাড়াও কারো যদি এর চেয়ে ভাল মেনু জানা থাকে সেটি অনুসরণ করতে পারেন। ধন্যবাদ।।

(উল্লেখিত বিষয় গুলো ডায়াবেটিক ও কিডনির রোগীদের জন্য নয়। তাহারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোজার আহারের নিয়ম গুলো মেনে চলার অনুরোধ রাখছি। এবং বিশেষ কোন রোগের কারণে কোন বাধা নিষেধ থাকলে তাদের নিকট পরামর্শ আপনার ডাক্তারের স্বরণাপন্ন হোন)

লেখক – মো:ইব্রহিম খলিল ভূইঞা

ছবি সূত্র : গুগল