দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার বরগুনা প্রতিনিধি তালুকদার মাসউদকে বরগুনা প্রেসক্লাবে আটকে রেখে নির্যাতনের পর মৃত্যুর অভিযোগে ১৪জনকে আসামী করে হত্যা মামলা রুজু হয়েছে। সোমবার বেলা তিনটার দিকে নিহতের স্ত্রী সাজেদা বাদী হয়ে বরগুনা সদর থানায় মামলাটি রুজু করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম মোঃ মিজানুর রহমান। মামলার আসামীরা হলেন, আ.স.ম হাফিজ আল আসাদ (সোহেল হাফিজ), আরিফুল ইসলাম মুরাদ (২৮), মোঃ কাসেম হাওলাদার (৩০), ফেরদৌস খান ইমন (৪০) মোঃ সাইফুল ইসলাম মিরাজ (৩০), মোঃ ছগির হোসেন টিটু (২৮), আঃ মালেক মিঠু (২৮) ওয়ালিউল্লাহ ইমরান (২৮), জাহিদুল ইসলাম মেহেদী (২৮), সোহাগ হাওলাদার (২৫), এ.এস.এম সিফাত (২৭), শহিদুল ইসলাম শহিদ (৪৫), ও মোঃ জাফর হোসেন হাওলাদার। এদের মধ্যে আ.স.ম হাফিজ আল আসাদ (সোহেল হাফিজ) এনটিভি, ফেরদৌস খান ইমন যমুনা টিভি, আঃ মালেক মিঠু ডিবিসি নিউজ, মোঃ সাইফুল ইসলাম মিরাজ সময় টেলিভিশন ও মোঃ জাফর হোসেন হাওলাদার মোহনা টেলিভিশনের বরগুনা প্রতিনিধি হিশেবে কর্মরত।নিহত সাংবাদিক তালুকদার মাসউদ বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং ওয়ার্ড গোরাপদ্মা এলাকার ইউপি আবদুল ওয়াহাব মাষ্টারের ছেলে। তিনি দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকা ও রাজধানী টেলিভিশন নামের একটি আইপি টিভির বরগুনা জেলা প্রতিনিধি। এছাড়াও তিনি ওই এলাকার ইউপি সদস্য ছিলেন। তার স্ত্রী সাজেদা একজন স্কুলশিক্ষক, মেয়ে তন্নি বরগুনা পলিটেকনিকে সিভিল প্রকৌশলে ৭ম সেমিস্টারে ও ছেলে তালুকদার তানহা বরগুনা জিলাস্কুলে ৭ম শ্রেণিতে অধ্যায়রত। মামলার আর্জিতে বাদির অভিযোগ, নিহত তালুকদার মাসউদ ভোরের ডাক পত্রিকার বরগুনা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। সে সুবাদে তিনি বরগুনা প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে ২০১৫ সালের ২৯জুলাই ‘বরগুনা জেলা প্রেসক্লাব’ নামে একটি সংগঠন করেন। এতে বরগুনা প্রেসক্লাবের নেতৃত্বস্থানীয় কিছু সদস্য তালুকদার মাসউদের উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। গত ১৯ ফেব্রæয়ারী বেলা ১০টার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাবের সদস্য মুশফিক আরিফের সাথে বরগুনা প্রেসক্লাবে গিয়ে ক্যারাম খেলা শুরু করেন সাংবাদিক তালুকদার মাসউদ। প্রেসক্লাবে ক্যারাম খেলতে দেখে এনটিভির বরগুনা প্রতিনিধি সোহেল হাফিজ তালুকদার মাসউদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ শুরু করেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে তর্কের এক পর্যায়ে সোহেল হাফিজসহ অন্য আসামীরা প্রেসক্লাবের গেট বন্ধ করে হামলা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও আসামীরা গেট তালাবদ্ধ করে রাখে। প্রায় এক ঘন্টা প্রেসক্লাবে আটক থাকার পর বরগুনা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম মিজানুর রহমান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত বশিরুল আলম প্রেসক্লাবে প্রবেশ করে তাঁকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখান থেকে উন্নত চিকিতসার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাপসাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার ১১ দিন পর শনিবার (০২ মার্চ) রাত ১১ টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তালুকদার মাসউদ।এ বিষয়ে মামলার বাদি ও নিহত সাংবাদিক তালুকদার মাসউদের স্ত্রী সাজেদা বলেন, ‘ জেলা প্রেসক্লাব গঠনের পর থেকেই বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এনটিভির বরগুনা প্রতিনিধি সোহেল হাফিজ ও তার অনুসারি কিছু সাংবাদিক আমার স্বামীর উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। জেলা প্রেসক্লাব বন্ধ করতে বেশ কয়েকবার সোহেল হাফিজ আমার স্বামীকে হুমকি ধামকি ও দিয়েছেন। এই রেষেই ঘটনার দিন আসামী সোহেল হাফিজসহ অন্যরা আমার স্বামীকে প্রেসক্লাবে আটকে রেখে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করেছেন। আমার একমাত্র মেয়ে এখনো পড়াশোনা করে, ছেলের বয়স মাত্র ১৩ বছর। স্বামীর মৃত্যুতে আমরা দিশেহারা। আমি এই হত্যাকান্ডের ন্যায় বিচার চাই।এ বিষয়ে বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তফা কাদেরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। সাবেক সভাপতি মোঃ হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, তালুকদার মাসউদের মৃত্যুর ঘটনায় আমি ব্যথিত। থানায় মামলা হয়েছে। অপরাধী যেই হোকনা কেন, আমি আশা করি তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। বরগুনা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, সাংবাদিক তালুকদার মাসউদের মৃত্যুর ঘটনাটি দুঃখজনক। তার স্ত্রী সাজেদা বাদি হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেছেন। আমরা আসামীদের যতদ্রুত সম্ভব গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা চালাচ্ছি।গত রবিবার বিকেলে তালুকদার মাসউদের মরদেহ বরিশাল হাসপাতাল থেকে বরগুনায় নিয়ে আসা হয়। পৌরসভা ভবনের পশ্চিম পাশের মাঠে জানাজা শেষে রাতেই গ্রামের বাড়ি নলটোনা ইউনিয়নের গোরাদ্মা এলাকায় দাফন করা হয়। তাঁর মৃত্যুতে বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়ন, রিপোর্টার্স ইউনিটি ও রিপোর্টার্স ফোরাম শোক জানিয়ে ঘটনায় জরিতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে।